বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:১৫ পূর্বাহ্ন
দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ দিনাজপুরের মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে সাদা সোনাখ্যাত রসুন। তবে রসুনের ফলন ভালো হলেও দাম নিয়ে শঙ্কায় চাষিরা।
জানা গেছে, জেলার প্রতিটি উপজেলায় রসুন আবাদ হলেও খানসামা, চিরিরবন্দর ও বীরগঞ্জে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়। তবে ফলন ভালো হওয়ায় অন্যান্য উপজেলাতে আবাদ বেড়েছে। রসুনের উৎপাদন অনেক বেশি হওয়ায় জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হয়।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে মোট উৎপাদিত রসুনের ৫ শতাংশ চাষ হয় দিনাজপুরে। জেলায় গত মৌসুমে ৫ হাজার ৮৩ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদ করা হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছিল খানসামায়। এ উপজেলায় ৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ হয়েছিল। কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় এবার ৮৩৩ হেক্টর জমিতে কম আবাদ করা হয়েছে। এবার ৪ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদ হয়েছে।
খানসামা উপজেলার কাছনিয়া বাজার এলাকায় দেখা যায়, রসুনের ফলন ভালো হয়েছে। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই রসুন ঘরে তুলবেন চাষিরা। তবে যারা উঁচু জমিতে লাগিয়েছেন তারা রসুন তুলে বাজারে বিক্রি করছেন। তবে ফলন ভালো হলেও দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা।
কৃষকরা জানিয়েছেন, আগে প্রতি কেজি রসুন ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হলেও সেটা এখন ১৫-২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত বাজারে রসুনের দাম না থাকলে কৃষকরা খরচ তুলতে হিমশম খাবেন। কারণ এক বিঘা জমিতে রসুণ আবাদ করতে খরচ হয় প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে রসুন উৎপাদন হয় ৫০ থেকে ৭০ মণ।
কাছনিয়া আগ্রা গ্রামের কৃষক হাফিজ উদ্দিন বলেন, দুই বছর ধরে রসুনের বাজার আর আগের মতো নেই। আগে আমরা রসুন পাইকারি বাজারে তিন থেকে চার হাজার টাকা মণ বিক্রি করতাম। এখন মাত্র ৪০০-৫০০ টাকা মণ বিক্রি করছি। এক মণ রসুন ফলাতে খরচ প্রায় দুই হাজার টাকা। অথচ বাজার বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪০০-৫০০ টাকা। মণপ্রতি লোকসান হচ্ছে ১৬০০ টাকা। এভাবে চললে আমরা কৃষকরা বাঁচব কীভাবে?
রসুনচাষি আব্দুল জব্বার বলেন, রসুনের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বাজার নেই। রসুনের বাজার না থাকায় আমাদের ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু আমরা তো কৃষক। আমাদের কৃষিকাজ করেই সংসার চলে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা রসুন, আলু, ধান চাষ করি।
রসুনচাষি নাসির উদ্দিন বলেন, প্রায় তিন একর জমিতে এবার রসুন আবাদ করেছি। রসুনের ফলন ভালো হয়েছে কিন্তু সার, বীজ, কিটনাশক ও পরিচর্যায় খরচ অনেক। এক বিঘা জমিতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয় কিন্তু বাজারের যে অবস্থা তাতে খরচ তুলতে পারব না।
রসুনচাষি হোসাইন আলী বলেন, এক বিঘা জমিতে রসুন চাষ করতে খরচ প্রায় ৪০ হাজার টাকা। প্রতি সপ্তাহে ৭০০-৮০০ টাকার কীটনাশক দিতে হয়। কিন্তু রসুনের বাজার নেই। আমরা রসুন আবাদ করে খরচ তুলতে পারছি না।
খানসাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাসুদেব রায় বলেন, দিনাজপুর জেলার খানসামায় এবার ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার রসুনের আবাদ কমেছে প্রায় এক হাজার হেক্টর। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে ন্যায্য দাম না পাওয়া। গত বছর রসুন উৎপাদন হয়েছিল ১০ মেট্রিক টন। তবে এবার আবাদ কম হলেও রসুনের বাম্পার ফলন হয়েছে।আশা করছি গত বছরের তুলনায় উৎপাদন ছাড়িয়ে যাবে।